এক কেজি দুধ দশ টাকা

0

স্টাফ রিপোর্টারঃ

শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সারা বছরের ন্যায় এ মাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশে এর পুরো ব্যতিক্রম। এ দেশের ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সব জিনিসপত্রের বাজার দর উর্ধ্বমুখি থাকে। আর এ কারণে বিপাকে পড়তে হয় কেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। ঠিক সে সময়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যতিক্রমি উদ্যোগ নিয়েছেন মোঃ এরশাদ উদ্দিন। যেখানে তিনি মঙ্গলবার (১২ মার্চ) পুরো রমজান মাস জুড়ে ১০ টাকা কেজি ধরে দুধ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছেন।

মোঃ এরশাদ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেসি অ্যাগ্রো ফার্মের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য।

জানা গেছে, চারবছর আগে এরশাদ উদ্দিন নিজ এলাকায় জে সি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে দুগ্ধ ও মোটাতাজাকরণের তিন শতাধিক গরু রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ২৫টি গরু দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন খামার থেকে ৭০-৭৫ কেজি দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি রমজান মাসে সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদার কথা মাথায় রেখে নাম মাত্র মূল্য ১০ টাকা কেজি ধরে দুধ বিক্রি করে আসছেন তিনি। রমজানের প্রথমদিন থেকেই প্রতিদিন সকাল ১১টায় খামার থেকে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করা হয়। যেখানে নিজ এলাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিম্ন আয়ের মানুষজন দুধ নিতে আসেন। সাধারণত বাজারে প্রতি লিটার দুধ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। যে কেউ তার খামার থেকে মাত্র ১০ টাকা কেজি  দরে সর্বোচ্চ  ১ কেজি দুধ কিনতে পারবেন।  কমদামে  দুধ নিতে পেরে খুশি সাধারণ মানুষ।

নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, বাজারে সব কিছুরই মূল্য অনেক। রমজানে ১২০ টাকা লিটার করে দুধ কিনে খাওয়া আমাদের সম্ভব না। এরশাদ ভাই ১০ টাকা করে দুধ দিতেছে এই দুধ দিয়েই আমরা সেহরি খাব। আমাদের সকল বিপদেই এরশাদ ভাই পাশে থাকেন।

বয়রা মধ্যপাড়া গ্রামের মার্জিয়া ও হাফসা খাতুন জানান, আজ রমজানের শুরুর দিন। এই প্রথম দিন থেকেই এরশাদ সাহেব আমাদকে ১০ টাকা দরে এক লিটার দুধ দিয়েছেন। প্রতিদিনই ১ লিটার দুধ দিবেন ১০ টাকায়। আমরা অনেক খুশি কারণ আমাদের মতো গরীব মানুষের ১২০টাকা লিটার করে বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব না।

মোহাম্মদ ইমরান জানান, এরশাদ ভাইয়ের এ মানবিক উদ্যোগ আমাদের উপজেলায় প্রশংসিত হয়েছে। তিনি এবছর নিয়ে চারবছর ধরে রমজানে ১০ টাকা কেজি দুধ বিক্রি করে আসছেন। ১০ টাকা হলো নাম মাত্র মূল্য। কারণ বিনামূল্যে দিলে অনেকেই লজ্জায় নিতে চাইবেন না তাই ১ লিটার দুধ মাত্র ১০ টাকা মূল্য রাখছেন। তিনি সব সময়ই এমন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন।

এরশাদ উদ্দিন জানান, রমজান আসলেই এলাকায় দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। হাট-বাজারগুলোতে এক কেজি দুধ ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১২০ টাকা দামে নিম্নবিত্ত মানুষ ক্রয় করে খাওয়ার ক্ষমতা নেই। এ বিষয়টা চিন্তা করেই তাদের জন্য নামমাত্র ১০ টাকা মূল্যে ৭০ জনকে ১ লিটার করে দুধ দিয়েছি।  এমনও লোকজনকে বিনামূল্যে দুধ দিয়েছি। প্রথম রমজান থেকে এ কার্যক্রম শুরু শুরু হয়েছে চলবে রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, পুরো রমজানে আমার খামারে যা দুধ উৎপাদন হবে সবই ১০ টাকা করে বিক্রি করা হবে। সেই সিবে এ রমজানে ২ মেট্রিক টন দুধ ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। সে হিসেবে দৈনিক ৭০ থেকে ৭৫ জন ১০ টাকা দরে দুধ কিনতে পারবেন।

Share.