স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) পাকুন্দিয়া উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক রাজিন সালেহ’ র বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তালাক দেয়ার অভিযোগ উঠেছে । এমনকি তার আড়াই বছরের শিশু কন্যাকে স্ত্রীর কাছ থেকে জোড় করে নিজের কাছে রেখে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১০জুলাই) সকালে পাকুন্দিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী নারী সুমাইয়া আক্তার হাসি লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি উপজেলার চরটেকী গ্রামের তাজউদ্দিনের মেয়ে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে তার মা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত এনসিপি নেতা রাজিন সালেহ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে এবং এনসিপির পাকুন্দিয়া উপজেলা সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী। গত ২৯জুন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দীয় কমিটি (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং সদস্য সচীব আখতার হোসেন সাক্ষরিত ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে রাজিন সালেহকে প্রধান সমন্বয়কারী রাখা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, গত ৫ বছর আগে এনসিপি নেতা রাজিন সালেহ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিছুদিন যেতে না যেতেই আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। আমার এবং আমার পরিবারের সাথে অবজ্ঞাসূচক আচরণ করতে থাকেন এবং আমাকে প্রায়ই মারধর করে আমার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতো। আমাদের সংসারে আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে বিধায় আমি আমার মেয়ের দিকে চেয়ে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে আসছি।
গত দেড়বছর আগে আমার স্বামী রাজিন সালেহের পার্শ্ববর্তী গফরগাঁও উপজেলার দিঘীরপাড় আলীয়া মাদ্রাসায় কম্পিউটার অপারেটর পদে ১৩লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকুরি নেয়। চাকুরির টাকার জন্য আমার কাছ থেকে আমার ব্যবহৃত ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দেয়। এর কয়েকদিন পরেই আমাকে নতুন করে নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে আমার স্বামী আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমি বাধ্য হয়ে আমার বাবার বাড়ি চলে আসি।
গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর সে এনসিপি নেতা হয়ে আমার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং আমাকে তালাক দেয়ার হুমকী দেয়। এ প্রেক্ষিতে আমি গত ৩০ জুন পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগের পর এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা সানী আহম্মেদ আমাকে ফোনে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয় এবং এ বিষয়ে মিমাংসা করে দিবে বলে আশ্বাস দেয়। এতে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ স্থগিত রাখার জন্য বলি। কিন্তু বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলেও সমাধানের কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি তিনি। গত ৫ জুলাই আমার স্বামী আমার বাবার বাড়িতে তার এক ভাগিনাকে সাথে নিয়ে আমার শিশু কন্যাকে বিকেলে দিয়ে যাবে বলে আমার কোল থেকে নিয়ে যায়। অদ্যবদি পর্যন্ত আমার মেয়েকে আর ফেরত দেয় নাই।
এ প্রেক্ষিতে আমি আবার গতকাল ৯ জুলাই পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আসলে আমি আমার অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও স্যারের কাছে উনার সহায়তা চাই। আমার ছোট বাচ্চাকেও আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। মায়ের কাছ থেকে সন্তান কে আলাদা করা হয়েছে। আমি ইউএনও স্যারকে বলেছি যথাযথ তদন্তপূর্বক আমাকে আমার স্বামীসহ সংসারে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্য। তখন ইউএনও স্যার আমার স্বামীকে ফোন দিলে তিনি বলেন বাচ্চাকে আমার কাছে দিবে না তখন ইউএনও স্যার আমাকে বলেন এবিষয়ে কোর্টের দারস্থ হওয়ার জন্য। এছাড়া আরও জানতে পারি গত ২৭ জুন আমার স্বামী আমাকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দিয়ে দিছে। অথচ আমি ইহার কোন কিছুই অবগত নই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বামী পাকুন্দিয়া উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী রাজিন সালেহ বলেন, আমি গত ২৭ তারিখই তাকে তালাক দিয়েছি আইন ও বিধি অনুযায়ী । এবং তার যে কাবিনের টাকা তা আমি ডাকের মাধ্যমে জমা দিয়েছি। সে ডাকের চিঠিটা প্রত্যাখান করছে। মূলত একটি মহল আমাকে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এটার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত যেহেতু তাদের কন্যা শিশু রয়েছে। কন্যা শিশুর ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে যেনো ন্যায়বিচার প্রাপ্ত হয় এটাই আমাদের চাওয়া।