স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ-ইট-সুরকির গাঁথুনির চেয়েও যার ভিত্তি গড়া মানুষের বিশ্বাসে। এখানে দান মানে শুধু টাকা ফেলা নয়, বরং আশা, আকুতি আর না বলা কথাগুলো সিন্দুকের অন্ধকারে রেখে যাওয়া। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালবেলা সেই বিশ্বাসের সিন্দুক আবারও খুলে গেল। দীর্ঘ ৩ মাস ২৭ দিনের নীরবতা ভেঙে ১০টি দানবাক্স ও ৩টি ট্র্যাংক থেকে বেরিয়ে এলো ৩৫ বস্তা টাকা। দিনভর গণনা শেষে সন্ধ্যায় টাকার পরিমান দাড়ায় ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা। এছাড়াও স্বর্ণ, রুপা, রিয়েল, রিঙ্গিতসহ বৈদেশিক মুদ্রা। রাত ৮ টায় দানের টাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭ টায় কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে খোলা হয় দানবাক্সগুলো। এরপর বস্তায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ঢেলে দেওয়া হয় বিশ্বাসের এই অঢেল ফসল। সকাল ৯টায় শুরু হয় গণনার আয়োজন-যেন দানের উৎসব। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে সারাদিন ধরে চলতে থাকে হিসাবের ব্যস্ততা। সন্ধ্যার আলোয় মিলবে টাকার চূড়ান্ত হিসাব।
এই দানের পাহাড় গুনতে নেমেছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। ৩৫০ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩৩ জন শিক্ষক ও স্টাফ, ২০ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য, ১০ জন আনসার ব্যাটালিয়ন, ৫ জন আনসার সদস্য, ১০০ জন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একসঙ্গে বসেছেন-সংখ্যা নয়, যেন মানুষের বিশ্বাসের ওজন মাপতে।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাগলা মসজিদ এখন অনলাইনেও পৌঁছে গেছে মানুষের হাতে। গত ৪ জুলাই চালু হয়েছে পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের অফিসিয়াল অনলাইন ডোনেশন ওয়েবসাইট। উদ্দেশ্য একটাই-দেশ-বিদেশে থাকা সেই মানুষগুলোর হাতে দানের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া, যারা ইচ্ছা থাকলেও মসজিদে আসতে পারেন না। পাশাপাশি ঠেকানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গজিয়ে ওঠা প্রতারকচক্র। অনলাইন মাধ্যম চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ১২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৩ টাকা।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, ৩ একর জমির উপর পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স রিসার্স সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নকশা প্রণয়নের জন্য রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং (রুয়েট) কাজ করছে। নকশার প্ল্যান পাওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট যখন দানবাক্স খোলা হয়েছিল, তখন ১৩টি সিন্দুক থেকে মিলেছিল রেকর্ড ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাগলা মসজিদের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে প্রায় ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩৮ টাকা। সংখ্যাগুলো বড় হলেও, বিশ্বাসের পরিমাপ তার চেয়েও বড়।