ভূট্টা আর কলাবাগানে সূর্যমুখী সাথী সফল হয়ে মুসকি হাসছেন চাষী

0

আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
সুষ্ঠু পরিকল্পনা, ইচ্ছেশক্তি আর যথাযথ শ্রম দিলে, যে কোন কাজেই যে, প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব-সেটাই প্রমাণ করেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের চরদেওকান্দি গ্রামের শতাধিক কৃষক। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তাঁরা দীর্ঘদিন থেকে একই জমিতে একের অধিক ফসলের চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে রেকর্ড গড়েছেন।

একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তাঁরা আবাদ করে আসছেন পিয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মুলা ও টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। নিজেদের সীমিত সম্পদের প্রতি ইঞ্চি মাটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অধিক ফসল ফলিয়ে একের পর এক লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। একই সাথে দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে পথ দেখাচ্ছেন অন্য কৃষকদেরও। তাঁদের এ সাফল্য দেখে এখন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষীরাও ঝুকছেন সাথী ফসল চাষে।

চাষীরা জানান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের পরামর্শ ও দিক নিদের্শনায় এবারই প্রথম তাঁদের এলাকায় শতাধিক কৃষক একই জমিতে ভূট্টা, কলা, বাদাম, সরিষা, ধনিয়া ও মরিচ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। এসব ক্ষেতে এখন সবুজের মাঝে সূর্যমুখী ফুল শোভা ছড়াচ্ছে। সূর্যমুখী চাষে সফল হওয়ায় তাঁরা খুবই খুশি ও আনন্দিত।

সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতের প্রধান ফসল সারি সারি ভ্ট্টূা আর কলাগাছ হাওয়ায় দোলছে। আর কিছুদিন পরই বের হবে কলা ও ভূট্টার মোচা। এসব ক্ষেতের মাঝেই সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়েছে স্বল্প মেয়াদী ফসল সূর্যমুখী। সূর্যমুখীও থেমে নেই যেন পাল্লা দিয়ে মাটি ফুঁড়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে আকাশে যেন এক নবীনসূর্য সম্ভাবনা নিয়ে। বাসন্তিরূপি হলুদ মাখা ফুলগুলো যেন ডাকছে অপরুপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

চরদেওকান্দি গ্রামের কৃষক মো. তাইজ উদ্দিন বলেন, আমাদের চরের জমিতে ধান চাষ করে কখনো লাভবান হতে পারছিলাম না। তাই উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ভাইয়ের দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় একই জমিতে সাথী ফসল করে এখন আমরা লাভবান হচ্ছি। তাঁর পরামর্শে এবার দেড় বিঘা কলাবাগানে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। আশা করছি এবার কলা ও সূর্যমুখী থেকে ভাল ফসল পাওয়া যাবে।

একই গ্রামের সিরাজ উদ্দিন, শামছুল হক ও উজ্জল মিয়া বলেন, ভূট্টার সাথে যে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করা যাবে তা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। মোশররফ ভাইয়ের পরামর্শে এবার আমরা সূর্যমুখী চাষ করেছি। এখন ভূট্টা আর সূর্যমুখী সমানতালে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠছে। আশা করছি এই দুটি ফসল থেকেই একটা ভাল ফলাফল পাব। এতে আমরা খুবই খুশি ও আনন্দিত।

এগারসিন্দুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, সূর্যমুখী অভিশাপ নয়, আর্শিবাদ। প্রতিনিয়ত কমছে নীট ফসলি জমি। বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রয়োজন হচ্ছে কম উৎপাদন খরচে পরিবেশ সম্মত উপায়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের। এক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হতে পারে সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ। যেমন সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী+আলু, সূর্যমুখী+মরিচ, সূর্যমুখী+সরিষা, সূর্যমুখী+বাদাম, সূর্যমুখী+ভুট্টা, সূর্যমুখী+কলা, সূর্যমুখী+গাজর ও সূর্যমুখী+পিঁয়াজ। তিনি বলেন, রবি খরিপ-১ ও খরিপ-২ এর বেলায়ও সাথী ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করা যাবে। যেমন সূর্যমুখী+পাট/আউশ ধান/রুপা আমন ধান, সূর্যমুখী+মরিচ/সবজি/আমন ধান, সূর্যমুখী+পতিত জমি। প্রতিটি শস্যবিন্যাসই স্থানীয় কৃষি পরিবেশ অনুয়ায়ী সাথী ফসল হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। আমি চলমান বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই এ সম্ভাবনার বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যসমূহ উপস্থাপন করেছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, এবারই প্রথম এ উপজেলার একটি পৌরসভাসহ নয়টি ইউনিয়নে কৃষি পুর্নবাসন/প্রণোদনার আওতায় ৩০০ কৃষককে এক কেজি করে সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হয়েছে। ৩০০ বিঘা জমিতে এ সূর্যমুখী বীজের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে এগারসিন্দুর ইউনিয়নেই শতাধিক কৃষক সূর্যমুখী সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল কৃষককে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনিদের্শনাসহ যাবতীয় সহযোগীতা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Share.