আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় প্রভাবশালী দখলদাররা দিনে-দুপুরে একটি সংখ্যালঘু পরিবারের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় দখলদাররা ভুক্তভোগী ওই পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটসহ তিন নারী সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলেই ভুক্তভোগী অশোক কুমার দে বাদী হয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে পাকুন্দিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা যায়, উপজেলার এগারোসিন্দুর ইউনিয়নের তালদর্শী গ্রামের হর চন্দ্র দে তালদর্শী মৌজার ২৪৯নম্বর খতিয়ানের ৭৪৪, ৭৫৮ ও ৮৯৬ দাগের ১৫৮শতাংশ জায়গা প্রায় ৮০বছর ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন। তিনি ১৯২৭সালের ১৭নভেম্বর তার ভাতিজা সুরেন্দ্র চন্দ্র দে’কে ওই জমি দানপত্র মূলে লিখে দেন। সুরেন্দ্র চন্দ্র দে ১৯৬১সালের ১৩সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী রেনু বালাকে কয়েকটি শর্তে ওই জমিটুকু উইল করে দেন। উইলের চার নম্বর শর্তে বলা আছে, রেনু বালা জীবিত অবস্থায় এই জমি কোনো প্রকার হস্তান্তর করিতে পারিবেন না। কিন্তু একই উপজেলার পাশর্^বর্তী চরখামা গ্রামের কুতুব উদ্দীনের তিন ছেলে মাজহারুল হক পাঠান, আমিনুল হক পাঠান ও মামুন পাঠান কৌশলে রেনু বালা ও তার ছেলে অজিত চন্দ্র দে এর কাছ থেকে ৮৯৬দাগের ৪৯শতাংশ জমি লিখে নেন। এর মধ্যে অজিত চন্দ্র দে ২০০৭সালের ২৬ডিসেম্বর মারা যান এবং ২০০৮সালের ১২অক্টোবর রেনু বালা মারা যান। বিষয়টি জানতে পেরে অজিত চন্দ্র দে’র ছেলে অশোক কুমার দে ২০১৯সালে কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে স্বত্ত্বের ঘোষণামূলক মামলা করেন। মামলা নং-১৭২। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২২মার্চ অশোক কুমার দে ওই জমিতে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশসহ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে চরখামা গ্রামের কুতুব উদ্দীন পাঠানের তিন ছেলে মাজহারুল হক পাঠান, আমিনুল হক পাঠান ও মামুন পাঠানের নেতৃত্বে ৫০-৬০জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রাদি নিয়া বিরোধপূর্ণ জমি দখল করে নিয়ে চারপাশে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ করেন। এতে বাধা দিতে গেলে অশোক কুমার দে’র মা ঝর্ণা রাণী দে, স্ত্রী প্রিয়তি রানী দে ও বোন সীমা রাণী দে’কে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। পরে বসতঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এক লাখ টাকার ক্ষতি করে। এসময় সন্ত্রাসীরা সুকেচের ড্রয়ারের তালা ভেঙে নগদ ৫৫হাজার ৫০০টাকা ও স্টীলের আলমিরার ড্রয়ারের তালা ভেঙে সাড়ে তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও ১৪হাজার টাকা মূল্যের একটি মুঠোফোন নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে শাহাদাত হোসেনের ছেলে দিদার প্রিয়তি রানীর গলা থেকে এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। যার মূল্য ৬৫হাজার টাকা। তাদের ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
অশোক কুমার দে বলেন, ‘এ জমি নিয়ে ২০১৯সালে স্বত্বের ঘোষণামূলক ও ২০২০সালে রিভিউ মামলা করেছি। মামলা দুটি চলমান থাকলেও কুতুব উদ্দীন পাঠানের ছেলেরা একদল গুন্ডাবাহিনী নিয়ে আমার এই জমি জবরদখল করে নিয়েছে। আমাদের নিরীহ পেয়ে আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এছাড়াও বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কুতুব উদ্দীনের ছেলে মামুন পাঠান বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ আমাদের কেনা সম্পত্তিতে আমরা কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। আমাদের কাছে ওই জমির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।