আছাদুজ্জামান খন্দকার
কাল বৈশাখীর গরম বাতাসে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় চলতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাতে কাল বৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার হাজারো কৃষকের স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেসব জমির ধান গাছে কেবল মাত্র শীষ বের হয়েছে সেগুলো গরম হাওয়ায় পুড়ে সাদা হয়ে গেছে। সোমবার সকালে কৃষক জমিতে গিয়ে ধানের এই অবস্থা দেখতে পেয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ খবর পেয়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে আজও মাঠে কাজ করে চলেছেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এবছর ১০হাজার ২৩০হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে রবিবার সন্ধ্যা ও রাতে দু’দফায় উপজেলার জাঙালিয়া, চরফরাদী, এগারসিন্দুর, বুরুদিয়া, পাটুয়াভাঙা, হোসেন্দী, নারান্দী, চ-িপাশা ও সুখিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে কাল বৈশাখীর গরম হাওয়া প্রবাহিত হয়। বর্তমানে ধানের ফ্লাওয়ারিং (কেবলমাত্র ফুল বের হওয়া) হওয়ার সময়। যেসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে সেসব জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে গিয়ে সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। এতে উৎপাদনের প্রায় শতকরা ২৫ভাগ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার কুমারপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, রোববার বিকেল থেকে কাল বৈশাখীর ঝড় বইতে শুরু করে। এর মধ্যে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে গরম বাতাস শুরু হয়। এই গরম বাতাস প্রায় আধঘন্টার মতো স্থায়ী হয়। সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, ফুল বের হওয়া ধানের শীষগুলো পুড়ে গিয়ে সব ধান সাদা হয়ে গেছে। আমার সাড়ে পাঁচ বিঘা ক্ষেতের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কি করব, কিভাবে চলব? বুঝতে পারছি না।
চরপলাশ গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, আমি ধার-দেনা করে ছয় বিঘা ক্ষেতে ধান চাষ করেছিলাম। তাও শেষ হয়ে গেল। কিভাবে বাঁচব, তাই ভাবছি। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মরতে হবে।
হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হামদু বলেন, রোববার রাতে আমার এই ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে প্রায় ৮০ভাগ কৃষকের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.সাইফুল হাসান আলামিন বলেন, রোববার দু’দফায় এ গরম বাতাস প্রবাহিত হয়। প্রথমে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ও রাত ১০টার দিকে এ উপজেলার ওপর দিয়ে গরম বাতাস বয়ে যায়। রাতে কিছুই বুঝা যায়নি। খবর পেয়ে সকালে কৃষকের জমিতে গিয়ে দেখি ফুল বের হওয়া ধানে গরম বাতাস লেগে পরাগায়ন শুকিয়ে গেছে। ধান গাছ ঠিক থাকলেও শীষগুলো শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এবছর এ উপজেলায় ১০হাজার ২৩০হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫০হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।