আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
করোনার ক্রাণে এক বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি থেকে হতাশায় ভুগছে। তাদের অনেকেই আবার পড়াশোনা ছেড়ে বাইরে অবাধে ঘুরাফেরা করছে। এই সুযোগে বেশিরভাগ কোমলমতি শিক্ষার্থীই মোবাইল গেমসহ নানা ধরনের আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এনিয়ে অনেক অভিভাবক ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে এর প্রতিকারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সী তরুণরা দলবেঁধে গ্রুপভিত্তিক মোবাইল ফোনে অনলাইন গেম খেলছে। কেউ গ্রামীণ সড়কের পাশে বা মোড়ে। কেউ অলি-গলিতে, কেউ খেলার মাঠে, কেউবা আবার নির্জন স্থানে বসে ৭-৮জনে মিলে ঘন্টার পর ঘন্টা এই গেম খেলছে। আর বলছে, তারাতারি গুলি কর। মাইরা ফালা..ইত্যাদি। এদের মধ্যে শিশু ও কিশোরের সংখ্যাই বেশি।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৮টি মহাবিদ্যালয়, ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০৩টি কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ের বিদ্যালয়, ৩১টি মাদ্রাসা ও ২২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। করোনার কারণে গত বছরের ১৭মার্চ থেকে সারাদেশের ন্যায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ। একই সঙ্গে কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে অবসর সময় পার করছে। পড়াশোনারও খুব একটা চাপ নেই। ফলে মোবাইল গেম খেলাকেই তারা সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, করোনার আগে শিশুরা দিনরাত পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো। ভোর থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতো। এখন বিদ্যালয়ের কথা ভুলে গিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল গেমসহ নানা ধরনের আসক্তিতে। এতে শুধু তাদের পড়াশোনারই ক্ষতি হচ্ছেনা, মন ও আচরণেও ক্ষতির প্রভাব পড়ছে।
সোহেল মিয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, কি করব। এক বছর ধরে স্কুল বন্ধ। সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা ভালো লাগেনা। তাই বন্ধুদের সঙ্গে বসে মোবাইলে গেম খেলি। স্কুল খোলা হলে তো আর খেলা যাবেনা।
পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা শাফিউল ও মহসিনসহ ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিভাবক জানান, গেম খেলার টাকা জোগাড়ের জন্য তাদের সন্তানরা নানা ধরনের বাহানা বা কৌশল করে থাকে। জামা, জুতা, বিস্কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনার কথা বলে টাকা নিচ্ছে। পরে আর সেগুলো কিনছেনা। আবার কেউ কেউ গোপনে বাবার পকেট থেকে বা মায়ের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা নিচ্ছে। এমনকি ঘর থেকে ধান ও চাল চুরির ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
কুমারপুর এলাকার একজন নারী অভিভাবক বলেন, এ খেলাটি প্রশাসনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলে-মেয়েরা আমাদের নিষেধ মানছে না। এলাকার ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা ও খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিনরাত মোবাইল লইয়া ব্যস্ত থাকে। কারও কোনো কথাই এরা শোনেনা। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ খেলা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) একেএম লুৎফর রহমান বলেন, কোনো শিক্ষার্থী বা যুবসমাজকে মোবাইল গেম আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে অভিভাবকসহ সমাজের সবাই মিলে এ খেলার ক্ষতিকর দিকটা ভালো করে বুঝিয়ে তাদের এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ বিষয়ে সকল অভিভাবককে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।