আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
শত বছরের পুরনো একটি গ্রামীণ রাস্তায় জোরপূর্বক স্থাপনা ও দেওয়াল নির্মাণ করেছে এক প্রভাবশালী। এতে ৪০টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে, কৃষকরা ধান নিয়ে, চালকরা অটোরিকশা নিয়ে ও আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে পারছেন না। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের মধ্য পুটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের প্রধান রাস্তা থেকে চলাচলের জন্য বাড়ির পাশ দিয়ে সরু একটি মাটির রাস্তা। রাস্তার মাঝখানে একটি একচালা ছোট্ট টিনশেড ঘর নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর সামনে কিছুদূর পর আড়াআড়িভাবে ইট দিয়ে আরো একটি দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এতে চলাচলের পুরো রাস্তাটিই বন্ধ হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুরো রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ফুট ও প্রস্থ ৮ফুট। বাপ-দাদার আমল থেকেই লোকজন এই রাস্তা দিয়ে শতাধিক বছর ধরে চলাচল করে আসছেন। হঠাৎ গত তিন মাস আগে রাস্তার মালিকানা দাবি করে প্রতিবেশী মনসুর আলীর ছেলে মুনজিল মিয়া টিন দিয়ে একটি ছোট স্থাপনা ও ইট দিয়ে আরো একটি দেওয়াল নির্মাণ করে চলাচলের পথটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ৪০টি পরিবারের দুই শতাধিক লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
অবরুদ্ধ একটি পরিবারের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ৪০টি পরিবারের দুই শতাধিক লোক একসাথে আমরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছি। বাপ-দাদার আমল থেকেই শতাধিক বছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে সবাই চলাচল করে আসছি। হঠাৎ করে মুনজিল মিয়া নিজের জায়গা দাবি করে রাস্তার মধ্যে ঘর ও ইট দিয়ে দেওয়াল নির্মাণ করেছেন। তিন মাস ধরে আমরা পরিবারের লোকজন নিয়ে খুবই বেকায়দার মধ্যে রয়েছি।
অবরুদ্ধ পরিবারের আরেক সদস্য রতন মিয়া বলেন, গত তিন মাস ধরে আমাদেরকে আধা কিলোমিটার ঘুরে মানুষের ধান-ক্ষেতের আইল দিয়ে কাঁদা পানি মাড়িয়ে ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাড়িতে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। কৃষকরা ধান নিয়ে, চালকরা অটোরিকশা নিয়ে বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে পারছে না। এমনকি আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে আসতে পারছেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.শাহজাহান বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য চেয়ারম্যানকে নিয়ে তিনটি দরবার করেছি। কিন্তু মনজিল মিয়া কোনো দরবারই মানছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মুনজিল মিয়া বলেন, জায়গাটি আমার বাহির বাড়ির উঠান। এ জায়গা দিয়ে তারা অবাধে চলাফেরা করলেও এখন আমি সীমানা প্রাচীর দিয়ে জায়গাটি আমার আয়ত্বে নিয়ে এসেছি। এর পরিবর্তে আমার বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে চলাচলের রাস্তার জন্য গাছ কেটে জায়গা করে দিয়েছি। কিন্তু তারা মানছেনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত)একেএম লুৎফর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।