আছাদুজ্জামান খন্দকারঃ
প্রাণঘাতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রায় সব মানুষ ঘরবন্দি। থেমে গেছে স্বাভাবিক জীবন। রয়েছেন নানা সংকটে। বন্ধ হয়ে গেছে পরিবহন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, বিবাহ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হাট-বাজারগুলোতেও কমে গেছে লোক সমাগম। সারাদেশে লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, বিজিবি’র সঙ্গে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতা শুন্যতায় চরম বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আড়াই হাজার দুগ্ধ খামারি। ক্রমাগত লোকসানের কারণে তাদের খামারগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি নির্ভর এ উপজেলায় কৃষির পাশাপাশি পরিবারগুলো নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পরিবার ভিত্তিক ছোট-বড় অসংখ্য দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেন। প্রতিটি পরিবারই যেন হয়ে উঠেছে একেকটি দুগ্ধ খামার। এসব খামারের আয় থেকেই অধিকাংশ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পারায় গাভীকেও পরিমাণ মতো খাবার দিতে পারছেন না খামারিরা। ফলে গাভী ও দুধ নিয়ে চরম বিপাকে আছেন তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলে দুই হাজার ৫০০টি গাভীর খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০হাজার ৫০০লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এছাড়া হিসেবের বাইরেও গ্রামে অসংখ্য কৃষক রয়েছেন যারা একটি করে গাভী পালন করছেন। সেখান থেকেও প্রচুর দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব দুধ উপজেলার বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট, মিষ্টি ও চায়ের দোকানসহ বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করা হয়। অবশিষ্ট দুধ খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। কিন্তু করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করায় গত তিন দিন ধরে ক্রেতারা দুধ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে খামারিদের দুধ সরবরাহের জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার মঙলবাড়িয়া গ্রামের মুঞ্জুরুল হক জানান, তাঁর খামারে পাঁচটি বিদেশী গাভী আছে। এসব গাভী থেকে প্রতিদিন তাঁর ৯৬লিটার দুধ উৎপাদন হয়। যেসব মিষ্টির দোকানে তিনি দুধ বিক্রি করতেন লকডাউনের কারণে সেসব দোকান বন্ধ থাকায় তিনি দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। একারণে পাঁচটি গাভীর প্রতিদিনের খাবারের টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে গাভী বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
উপজেলার বীরপাকুন্দিয়া গ্রামের সেলিম মিয়া ও কুমারপুর গ্রামের গোলাম রব্বানী বলেন, বাজারে গো-খাদ্যের দামও অনেক বেড়ে গেছে। অথচ বাজারে দুধ বিক্রি করা যাচ্ছে না। আমরা দুধ ও গাভী নিয়ে খুবই বিপাকে আছি। সরকার যদি করোনার এই দুঃসময়ে খামারিদের দুধ বিক্রি করার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে খামারিরা বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেত।
পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলো হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ায় খামারিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। করোনার এই দুঃসময়ে খামারিদের দুধ বিক্রি করার জন্য ভ্রাম্যমাণ পরিবহনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।