স্টাফ রিপোর্টারঃ
এবার ৪ মাস পর আবারও কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়েছে। এবার রেকর্ড ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছে। এরই মধ্যে বিকেলে দানের টাকা পাঁচ কোটি ছাড়িয়েছে।
শনিবার (০৬ মে) সকাল ৮টায় মসজিদের আটটি সিন্ধুক খোলা হয়। এখন চলছে গণনা কার্যক্রম। যা চলবে দিনব্যাপী। গণনা শেষে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। এবারও সিন্ধুক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা পাওয়া গিয়েছে। প্রতি তিনমাস পর পর সিন্ধুক খোলা হলেও এবার রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের জন্য ৪ মাস পর সিন্ধুক খোলা হয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে রেকর্ড ২০ বস্তা টাকায় দিনভর গণনা শেষে প্রাপ্ত দানের পরিমান দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
দায়িত্বরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, সকাল ৮ টায় ৮টি দানবাক্স খুলে ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্ধুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা কার্যক্রম। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে। গণনা কাজে মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়। এ ছাড়া এই মসজিদের জমানো টাকা দিয়ে মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ এখানে সুন্দর একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে এক শ কোটির বেশি টাকার প্রয়োজন হবে।
দানবাক্স খোলার সময় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, সিনিয়র সহাকরী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরীন তারিন, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।