স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী রাতুল মিয়া (২৪)। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাতুলের চাচা শফিকুল ইসলাম ১০ জনের নাম উল্লেখ করে হোসেনপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি বকুল মিয়াসহ ছয়জনকে বাদ দিয়ে গত ২৭ জুন আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পবিারের সদস্যদের।
রবিবার (২৩ জুলাই) চার্জশীট থেকে হত্যাকা-ে জড়িতদের বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
তারা বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সাহেবেরচর এলাকায় ছুফী সুলু শাহের মাজারে বৎসরিক ওরসে যাচ্ছিলেন রাতুল। এসময় বিশ^কাপ খেলা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে বকুল মিয়ার নেতৃত্বে রাতুলের উপর হামলা চালায় অভিযুক্তরা। এসময় কুপিয়ে ও পিটিয়ে রাতুলকে আহত করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হোসেনপুর হাসপাতাল পরবর্তিতে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সর্বশেষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাতুল মারা যায়। রাতুলের পিতা রফিকুল ইসলাম সাত বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মা বিলকিস দর্জির কাজ করে তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলে রাতুলের ভরণপোষণসহ রাতুলকে লেখাপড়া করিয়ে এইচএসসি পাস করান। এরপর রাতুল গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ছেলে রাতুলকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য মা বিলকিস ধারদেনা ও জমিজমা বিক্রি করেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি রাতুলের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এর মাত্র ১০দিন আগে গত ৭ই ফেব্রুয়ারি নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হয়ে মারা যায় রাতুল।
এ ঘটনায় মৃত আঃ আজিজের ছেলে মোঃ বকুল মিয়া (৪৫) কবির হোসেনের ছেলে মোঃ তালিফ (২০) ফজলু মিয়ার ছেলে মোঃ ফয়সাল (১৯) মোঃ খোকন মিয়ার ছেলে মুন্না মিয়া (১৯) মুক্তু ফকিরের ছেলে কফিল মিয়া (৪০) মৃত রহম আলী লেছে লিটন মিয়া (৪৫) মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে মাসুদ মিয়া (৩৫) মৃত মন্ডলের ছেলে শিপন মিয়া (৩৪) মোঃ জালাল উদ্দিনের ছেলে মারুফ মিয়া (২০) মৃত আঃ আজিজের ছেলে আঃ জলিল (৩৮) কে আসামি করা হয়। সকলেই সাহেবেরচর এলাকার বাসিন্দা।
স্বজনদের অভিযোগ, ঘটনার পর ৭ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করা হলে তার মৃত্যুর পর মামলায় ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়। গত ২৭শে জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হোসেনপুর থানার এস আই মোঃ মিল্টন মিয়া আদালতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে মামলার এজাহারনামীয় ১০ জন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি মোঃ বকুল মিয়াসহ মোট ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি পাওয়া অন্য পাঁচ আসামি হলেন, মোঃ কফিল মিয়া, মোঃ লিটন মিয়া, মোঃ মাসুদ মিয়া, মোঃ সিপন মিয়া ও আব্দুল জলিল
মামলার বাদী মোঃ শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মোঃ বকুল মিয়া এই হত্যাকা-ের মূল হোতা। তাকেসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ ছয়জন আসামিকে চার্জশীটে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে এই ছয়জন আসামির নাম বাদ দিয়েছেন। এতে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ মামলার পুনঃতদন্ত প্রয়োজন। তাই আদালতে আমরা এ চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজি দিবো। এ মামলার আসামিদের মধ্যে তালিফ ছাড়া বাকি সবাই জামিনে রয়েছে। জামিনে এসে তারা মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য তাকে খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি গত ৩০শে মে হোসেনপুর থানায় একটি জিডি করেছেন। এছাড়া মামলার আসামিদের মধ্যে অনেকেই ঘটনার পর দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছে।
চার্জশীটে প্রধান আসামিসহ এজাহারনামীয় ছয়জন আসামির নাম বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে হোসেনপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, পরিপূর্ণ তদন্তের ভিত্তিতে মামলার চার্জশীট দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাদীপক্ষের কোন আপত্তি থাকলে তারা আদালতে নারাজি দিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী ও নিহত রাতুলের চাচা মোঃ শফিকুল ইসলাম, মা বিলকিস, তিন বোন বিথী আক্তার, স্মৃতি আক্তার ও লুবনা আক্তার, চাচা সাহিদ মিয়া, চাচি মোছাঃ মমতাজ বেগম, দাদা মোঃ নজরুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।