স্টাফ রিপোর্টারঃ
অজ্ঞাত তরুণীকে (২১) ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার দীর্ঘ ২৭ বছর পালিয়েও শেষরক্ষা হয়নি ওয়াহিদুল্লাহ (৬৫) নামের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামির। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে কিশোরগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গতকাল রোববার রাতে পাশ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর উপজেলার বিন্নারবন্দ ঘাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। আদালতে সাজা হওয়ার পর থেকে সে নাম পরিচয় গোপন করে পলাতক ছিলেন কিশোরগঞ্জের ওই ব্যক্তি।
গ্রেপ্তারকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামির ওয়াহিদুল্লাহ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার মৌটুপি গ্রামের মৃত রুপ বাদশাহের ছেলে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, জেলার ভৈরব উপজেলার রসুলপুর গ্রামের বিলের ডোবা পানি থেকে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। পরে একই মাসেই ভৈরব থানায় ধর্ষণের পর হত্যা মামলা রুজু হয়।
পুলিশ আরও জানায়, আসামি ওয়াহিদুল্লাহ রাজধানী ঢাকার গুলশানের বস্তিতে বসবাস করতেন। তিনি তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকার একটি গার্মেন্টসের সামনে গিয়ে বাদাম বিক্রি করতেন। এর সূত্র ধরে ওই গার্মেন্টসের দারোয়ান নিজামের সঙ্গে ওয়াহিদুল্লাহর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর নিজাম তার কথিত স্ত্রীকে (ভুক্তভোগী তরুণী) নিয়ে ভৈরব উপজেলার মৌটুপি গ্রামে ওয়াহিদুল্লাহর বাড়িতে দাওয়াতে আসেন। দাওয়াত শেষে বিকেলে তাঁর কথিত স্ত্রী ঢাকায় চলে যাওয়ার বায়না ধরেন। পরে ওয়াহিদুল্লাহ, দারোয়ান নিজাম ও কথিত স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরদিন সকালে ওই কথিত স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকেই ওয়াহিদুল্লাহ আত্মগোপনে চলে যান। কিছুদিন ঢাকায় থাকার পর তিনি সুনামগঞ্জে চলে যান। সুনামগঞ্জে কয়লার শ্রমিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। পরে জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ করতেন। এই সময়ের মধ্যে ওয়াহিদুল্লাহ ভৈরবের জমিজমা বিক্রি করে সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার বিন্নারবন্দ এলাকায় অদুদ মিয়া (ছদ্মনাম) নামে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। আসামি ওয়াহিদুল্লাহ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওই এলাকায় নতুন পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন জানান, ২০০২ সালের ৯ অক্টোবর আসামি ওয়াহিদুল্লাহকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন রায় ঘোষণা করেন আদালত। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে ওয়াহিদুল্লাহ প্রায় ২৭ বছর যাবৎ পলাতক ছিলেন। পলাতক থাকা অবস্থাতেই আদালত তার সাজার রায় ঘোষণা করেন। গোপন সংবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে গতকাল রোববার ওয়াহিদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
