ধর্ষণের পর অন্তসত্বা নারীকে হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

0

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ধর্ষণের পর অন্তসত্বা নারীকে হত্যা মামলার পলাতক আসামি সোহেল মিয়াকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ভোরে পাশ্ববর্তী জেলা নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সাতাশি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার সোহেল মিয়া নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সাতাশি গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় র‍্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার আতকাপাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার চন্দ্রপুর এলাকার হক মেম্বারের কলোনীতে থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। আলাল উদ্দিনের সঙ্গে মেয়ে সুফিয়া খাতুনও (২৭) তার দুই শিশুসন্তানসহ সেখানে থাকতেন। একই কলোনীতে থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন সোহেল মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সাতাশি গ্রামে।

একই জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে আলাল উদ্দিনের সঙ্গে সোহেল মিয়ার সখ্যতা গড়ে উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রায়ই আলাল উদ্দিনের বাসায় যাওয়া আসা করতেন সোহেল। এ সুযোগে সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এদিকে রাজমিস্ত্রীর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আলাল উদ্দিন তার মেয়ে ও মেয়ের দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। সোহেলও প্রায়ই আলাল উদ্দিনের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সুফিয়াকে তার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটায়। চলতি বছরের ২১ মার্চ এবং পরবর্তী বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সুফিয়া খাতুনকে বিয়ের প্রলোভনে নিজ বাড়িতে ধর্ষণ করেন সোহেল। ধর্ষণের ফলে সুফিয়া অন্তসত্বা হয়ে পড়লে সোহেলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। সোহেল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সুফিয়া তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি হননি।

গত ১৪ আগস্ট বিকালে সুফিয়ার ঘরে গিয়ে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সোহেল তার পেটে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে চেপে ধরেন। এতে সুফিয়ার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তার আত্মীয় স্বজন সুফিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে চিকিৎসক সুফিয়ার পাঁচ মাসের সন্তানের গর্ভপাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সুফিয়া চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার পিতা আলাল উদ্দিন বাদী হয়ে আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। আদালত কলমাকান্দা থানাকে এ সংক্রান্তে মামলা দায়ের করার আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলমাকান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুফিয়া খাতুন ২৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। মামলাটি বর্তমানে হত্যা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গ্রেফতার এড়াতে সোহেল মিয়া আত্মগোপনে চলে যান এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকেন। র‍্যাব তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সাতাশি গ্রামে সোহেলের অবস্থান নিশ্চিত করে। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

র‍্যাবের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মো. আশরাফুল কবির জানান, আসামি সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে তার আগের স্ত্রী নূরজাহানের দায়েরকরা যৌতুক মামলায় ২০১৫ সালে তিনি দুই মাস কারাবাস করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গ্রেফতারের পর আসামি সোহেলকে কলমাকান্দা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Share.